Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

উদ্ভিজ্জ অ্যান্থোসায়ানিন : উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

শাকসবজি ও ফলমূল হলো মানুষের খাদ্যের অন্যতম মৌলিক উপাদান। এগুলো মানবদেহের অপরিহার্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদানের অন্যতম জোগানদাতা। এ ছাড়াও এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটসের অন্যতম প্রধান উৎস।  রঙিন শাকসবজি, ফলমূল ও ফুলে উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন ও স্বাস্থ্য সহায়ক উদ্ভিদ রঞ্জক (প্লান্ট পিগমেন্ট) থাকায় এগুলোর প্রতি মানুষের চাহিদা ও সচেতনতা দিন দিন বেড়ে চলছে। ক্লোরোফিল ছাড়া অন্যান্য প্রধান উদ্ভিজ্জ রঞ্জকগুলো হলো-ক্যারোটিনয়েড, ফ্লাভোনয়েড এবং বেটালিন। ফ্লাভোনয়েড হচ্ছে উদ্ভিজ্জ সেকেন্ডারি মেটাবোলাইটগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ গ্রুপ। বিজ্ঞানীরা এ পর্যন্ত প্রায় ৬০০০ প্রকার ফ্লাভোনয়েড শনাক্ত করেছেন। আর অ্যান্থোসায়ানিন হলো ‘ফ্লাভোনয়েড’ গ্রুপের এক ধরনের উদ্ভিজ্জ বায়োঅ্যাক্টিভ যৌগ বা উদ্ভিদের পাতা, ফুল, ফল ও মূলের বর্ণের প্রধান নিয়ামক।
অ্যান্থোসায়ানিন সাধারণত কোষের সাইটোপ্লাজমে তৈরি হয়। এটি পানিতে দ্রবণীয় এবং কোষ গহ্বরে গিয়ে সঞ্চিত হয়। এটি উদ্ভিদের বিভিন্ন বর্ণ যেমন- কমলা, লাল, গোলাপি এবং নীল বর্ণের জন্য দায়ী। উদ্ভিদে এদের এ বর্ণ বিভিন্নতার কারণ হলো কোষে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের সহরঞ্জক, মেটাল আয়ন ও কোষ গহ্বরের পিএইচ। দৃশ্যমান উদ্ভিজ্জ রঞ্জকগুলোর মধ্যে ক্লোরোফিলের পরেই অ্যান্থোসায়ানিনের অবস্থান। অ্যান্থোসায়ানিন উদ্ভিদের পাতা, ফুল, ফলকে বর্ণিল করে বিভিন্ন কীটপতঙ্গ এবং প্রাণীকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে পরাগায়ন ও প্রাকৃতিকভাবে বীজ বিস্তারে সাহায্য করে। এছাড়াও এরা আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে উদ্ভিদকুলকে রক্ষা করে। ১৮৩৫ সনে জার্মান উদ্ভিদ বিজ্ঞানী লুডউইং মার্কাট অ্যান্থোসায়ানিনের নামকরণ করেন। এটি মূলত দুটি গ্রিক শব্দ অ্যান্থোস অর্থ ফুল এবং ক্যানস অর্থ নীল থেকে এসেছে।
অ্যান্থোসায়ানিনের প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে রঙিন শাকসবজি (লালশাক, লাল লেটুস, কালো বেগুন, লাল শিম ও শিমের বীজ, লাল গোলআলু, লাল মুলা, লাল বরবটি, লাল মিষ্টিআলু, লাল বাঁধাকপি ও লাল ফুলকপি), মসলা (লাল পেঁয়াজ ও কালো কাঁচামরিচ), দেশি ফল (কালোজাম, করমচা, লাল জামরুল, কলা, আপেল কুল, লটকন ও ডালিম), বিদেশি ফল (ব্লুবেরি, বিলবেরি, ব্ল্যাককারেন্ট, ব্ল্যাকবেরি, ক্রানবেরি, স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, গুজবেরি, কালো আঙুর, চেরি, পিচ ও নেকটারিন)।
একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা মানবদেহে রোগ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। গত দু-দশক ধরে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ ফলাফলে দেখা গেছে যে, অ্যান্থোসায়ানিন মানবদেহে ক্যান্সার, হৃদরোগ, নিউরোডিজেনারেটিভ ব্যাধি, বার্ধক্যজনিত রোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও সিরামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর মাত্রা বৃদ্ধি, কোলস্টেরল বণ্টন, স্থূলতা হ্রাস, দৃষ্টিরোগ পুনঃস্থাপন ও লোহিত কণিকাকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
অ্যান্থোসায়ানিন নিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক গবেষণা হয়েছে এবং বর্তমানেও চলছে। উদাহরণস্বরূপ বুতেল্লি এবং তার সহকর্মীদের ২০০৮ সনের এক গবেষণার কথা উল্লেখ করা যায়। তারা তাদের পরীক্ষায় ক্যান্সার সংবেদনশীল ইঁদুর ‘টিআরপি৫৩’কে উচ্চমাত্রার অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ ট্রান্সজেনিক টমেটো পাউডার এবং একই সঙ্গে কিছু ‘টিআরপি৫৩’ ইদুঁরকে সাধারণ খাবার খাওয়ান, পরে তারা দেখেন যে ইঁদুরগুলো অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ টমেটো পাউডার খেয়েছিল তাদের জীবনকাল অন্যগুলোর তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হ্যান ও তার সহকর্মীরা (২০০৭) দেখতে পান, যে ইঁদুরকে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ লাল আলু খাওয়ালে, এরা কোলস্টেরল খাবার দ্বারা সৃষ্ট অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারে।
অ্যান্থোসায়ানিনের স্বাস্থ্য গুণাগুণ বিবেচনা করে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী উচ্চমাত্রায় অ্যান্থোসায়ানিন সমৃদ্ধ ট্রান্সজেনিক আপেল উদ্ভাবন করেছেন। এ ফলগুলোর গায়ে ও ভেতরে সাধারণ আপেলের তুলনায় অনেকগুণ বেশি অ্যান্থোসায়ানিন তৈরি হওয়ায় এদের বর্ণ লাল।
অ্যান্থোসায়ানিনের এসব স্বাস্থ্য উপকারী গুণাগুণ বিবেচনা করে বর্তমানে এটি ক্যাপসুল হিসেবে বাজারজাতকরণ শুরু হয়েছে। সর্বপ্রথম ২০০১ সনে নরওয়েভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘বায়োলিংক গ্রুপ’ বিলবেরি ও ব্ল্যাক কারেন্টের নির্যাস থেকে ওষুধ হিসেবে অ্যান্থোসায়ানিন ক্যাপসুল ‘ম্যাডক্স’ প্রস্তুত করেন। প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র নরওয়েতে বাজারজাতকরণ করা হয়। পরে ২০০৭ এর প্রথমদিকে আমেরিকায় বাজারজাতকরণের জন্য ‘ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ কর্তৃক অনুমোদন লাভ করে।
বাংলাদেশে এ রকম অ্যান্থোসায়ানিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ অনেক শাকসবজি, ফলমূল, দানাজাতীয় ও কন্দাল ফসল রয়েছে। যেগুলো দামে অত্যন্ত সস্তা ও সহজলভ্য। সুতরাং এসব ফসল শনাক্তকরণ করে জনসাধারণের মাঝে অ্যান্থোসায়ানিনের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করা সম্ভব।

ড. মো. আব্দুর রহিম*
*সহযোগী অধ্যাপক ও অ্যান্থোসায়ানিন গবেষক, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon